১৭ এপ্রিল, ২০১২

আমার লেখা গল্প



দাম্পত্য

                       প্রিন্স আহমেদ

এক. 
সন্ধ্যার দিকে টিএসসি থেকে শাহবাগ রাস্তাটায় বেশ ভিড় হয়, বিশেষ করে চারুকলা ও পাবলিক লাইব্রেরির সামনে চটপটি ও ফুসকার লোভে লোকজন ভিড় জমায়। ভিড় এড়ানোর জন্য ইমুকে নিয়ে কবি নজরুল ইসলামের মাজার ঘেষে ফুটপাথ দিয়ে হেটে আসছিলাম। ইমু আমার স্ত্রী, চার বছর প্রেমের অনার্স শেষ করে এক বছর হলো আমরা বিয়ে করেছি শুক্রবার ছুটির দিন তাই ইমুর অনুরোধে আজ টিএসসিতে বেড়াতে এসেছিলাম। বর্তমানে ইমু প্রেগনান্ট ওর হাটতে কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পেরে বললাম চলো-  পাবলিক লাইব্রেরির সামনে গেলেই রিকশা পাবো, ইমু আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো সমস্যা নেই- , আমি হাটতে পারবো 
-
তোমার কষ্ট হচ্ছে না?
-
তোমার সন্তান বহন করতে আমার কষ্ট হবে এটা ভাবলে কি করে?
তোমার সন্তান কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে ইমুর দিকে তাকালাম, ওকে ভালোবেসে আমি সুখী। আমার সন্তান পেটে বহন করছে এটা ভাবতেই খুব ভালোবাসতে ইচ্ছা হলো ওকে, বাম হাত দিয়ে ইমুর কোমরটা আলতো করে পেচিয়ে ধরে হাটতে থাকলাম। ইমু কেমন একটা মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকালো, তারপর ওর ডান হাত দিয়ে আমাকে ও পেচিয়ে ধরলো। হাটতে লাগলাম আমরা, হাটতে হাটতে আমরা চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে চলে এলাম, খালি রিকশা পাওয়ার জন্য রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি, ঠিক সেই সময় সাদা রঙের একটা প্রাইভেট কার এসে থামলো আমাদের সামনে, গাড়ি থেকে লম্বা চুলওয়ালা একটা লোক বেরিয়ে এসেই জড়িয়ে ধরলো আমাকে ,কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর চিনতে পারলাম তাকে, আমার বন্ধু খালেদ। চারুকলায় পড়তো, এখন কি করে জানি না, অনেক দিন যোগাযোগ নেই খালেদ একবার আমার ও ইমুর দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
-
কি করছিস এখানে? 
ঠোট টেনে হালকা হাসার চেষ্টা করে বললাম-  ইমুকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলাম, এখন যাওয়ার জন্য রিকশা খুজছি। 
-
এখন চলে যাবি কেন? ভাবীকে নিয়ে বেরিয়েছিস, আর কিছুক্ষণ থেকে যা।
-
ইমু অসুস্থ
খালেদ ইমুর দিকে একবার তাকিয়ে কি বুঝলো জানি না বললো- আচ্ছা, ঠিক আছে চল আমি পৌছে দিয়ে আসি।
-
না, না, তোকে কষ্ট করতে হবে না রিকশা নিয়েই চলে যাই।
-
শালা ! আমার কষ্ট হবে মানে ? বলেই ইমুর হাত ধরে টেনে গাড়ির দরজা খুলে বললো -বসুন ভাবী।
ইমু কি করবে বুঝতে না পেরে আমার দিকে অসহায়ের মতো করে তাকালো। আমি মাথা নেড়ে ইশারায় ইমুকে বসতে বললাম ,ইমু ভেতরে গিয়ে বসলো। গাড়ির সামনের দরজা খুলে আমিও খালেদের পাশে বসলাম ,খালেদ জিজ্ঞাসা করল এখন কোথায় থাকিস ?
-
শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাসের পাশে।
খালেদ গাড়ি স্টার্ট করে আবার জিজ্ঞাসা করলো শান্তিনগরে বাসা কিনেছিস নাকি ভাড়া থাকিস?
-
পাগল হয়েছিস? আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর সকল সম্পদ দিয়েও ঢাকায় বাড়ি কেনা সম্ভব? ছোট একটা ফ্যাট ভাড়া নিয়েছি, তুই কি করছিস এখন?
-
আগের মতোই আছি, ছবি আকা আর কবিতা লেখা ‍নিয়েকেন জানিস না, গত বই মেলায় আমার কবিতার বই বেশ চলেছে, মে মাসে জয়নুল গ্যালারিতে আমার ছবির একক একজিবিশন হবে, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম ভালো, নিজের ভুবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছিস 
-
তুই কি করছিস এখন? কোনো যোগাযোগ তো রাখিসনি, বান্না বলেছিল যে বিয়ে করেছিস
-একটা ফার্মে কমপিউটার অপারেটর হিসেবে ঢুকেছি পাশাপাশি চেষ্টা করছি অন্য জায়গায় ভালো চাকরি পেলে এটা ছেড়ে দেবো।
খালেদ গাড়িটা ফকিরাপুল মোড়ে থামিয়ে পকেট থেকে মার্লবোরো সিগারেটের প্যাকেট বের করলো, শুনেছি মালবোরো অভিজাত লোকেরা খায়, তাহলে খালেদের বর্তমান অবস্থা খুবই ভালো খালেদ প্রতিষ্ঠিত এ জন্য ভালো লাগলেও নিজেকে কেমন যেন ছোট ছোট মনে হলো ঘাড় ফিরিয়ে একবার ইমুর দিকে তাকালাম, ইমু মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে, খালেদ সিগারেটের প্যাকেটটা আমার দিকে এগিয়ে ধরে বললো- চলে ?
আমি মাথা নেড়ে না বললাম, খালেদ একটা সিগারেট জ্বালিয়ে পাশের কাচ নামিয়ে ধোয়া ছেড়ে আবার চালাতে শুরু করলো, ইমু, সিগারেট পছন্দ করে না,  সিগারেটের গন্ধও নাকি সহ্য করতে পারে না আবার ইমুর দিকে তাকালাম নাক চেপে বসে আছে, ওর চোখ দেখে খুব অসুস্থ বলে মনে হলো ইচ্ছা হচ্ছিল খালেদকে বলি যে, সিগারেটটা আমাদের নামিয়ে দেয়ার পর খাস, কিন্তু তার গাড়িতে চড়ে তাকে সিগারেট খেতে নিষেধ করার সাহস আমার হলো না শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাসের সামনে গাড়ি থেকে নামলাম খালেদকে বললাম চল এক কাপ চা খেয়ে যাস। খালেদ বলল- না আজ না, অন্য একদিন আসব। আমি ইমুকে নিয়ে রুমে ঢুকলাম। রুমে ঢুকেই ইমু প্রশ্ন করল ওই লোকটা তোমার কেমন বন্ধু? বললাম কলেজে আমরা একসঙ্গে পড়তাম মোটামুটি আমার ভালো বন্ধু।ইমু বলল-  ওনাকে কখনো আমাদের বাসায় আসতে বলবে না
-কেন? খালেদ তো খুব ভালো ছেলে, ও খুব ভালো ছবি আকে তুমি তো আর্টিস্টদের খুব পছন্দ করো তাছাড়া ও কবিতাও লেখে
-লিখুক ও রকম লম্বা চুলওয়ালা লোকেদের আমার ভালো লাগে না, আর সিগারেট খাওয়া লোক আমি সহ্যই করতে পারি না
-
খালেদ সিগারেট খেলে তোমার সমস্যা কি? আমি তো খাচ্ছি না, তুমি অসুস্থ শুনে যে গাড়িতে করে রেখে গেল, তাকে তুমি সহ্য করতে পারছো না
-
অসুস্থ বলে নয়, আমাকে স্পর্শ করার লোভে, দেখলে না? আমার হাত ধরে কেমন সুন্দর করে গাড়িতে ওঠালো পরের বউয়ের হাত ধরে যে সে আবার ভালো হয় কেমন করে?
 বুঝলাম ইমুর সঙ্গে পারবো না, আসলে ও আমাকে খুব বেশি ভালবাসে তো তাই ? শেষ পর্যন্ত ইমুর কাছে হার মেনে বললাম আচ্ছা খালেদকে বাসায় নিয়ে আসবো না।


    দুই.


আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি, গতকাল আমাদের একটা মেয়ে হয়েছে। পরিচিত অনেকেই দেখতে আসছে এজন্য আজ সারাদিন বাসায় থাকতে হবে। সকালের দিকে একজন মেয়ে দেখে আমার কাছে এসে বললো মেয়ে দেখতে ঠিক আপনার মতো হয়েছে মেয়েটা আমার মতো হয়েছে শুনে কি যে ভালো লাগছে সেটা যারা বাবা হয়েছে শুধু তারাই বুঝতে পারবে।দুপুরের দিকে কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খুললাম খুলে দেখি খালেদ, দুই হাতে বড় বড় দুটো ব্যাগ আমাকে দেখেই বলল- কনগ্রাচুলেশন!! মেয়ের বাবা হওয়া সৌভাগ্যের বিষয় মিষ্টি হেসে খালেদকে বললাম -ভেতরে আয় 
খালেদ ভেতরে এসে সোফায় বসে ব্যাগ থেকে দুটো দামি শাড়ি বের করে বললো, -এটা ভাবীর জন্য এবং ব্যাগের অন্য সব কিছু তোর মেয়ের জন্য।আমি মনে মনে উপহারগুলোর জন্য বেশ খুশি হয়েছি কারণ এগুলো পেলে ইমু হয়তো খুশি হবে, তবুও ভদ্রতা দেখানোর জন্য বললাম- খামাখা খরচ করে এসব আনতে গেলি কেন?
খালেদকে মেয়ে দেখিয়ে নিয়ে এসে বসার ঘরে মিষ্টি খেতে দিলাম কিছুক্ষণ চুপচাপ কি একটা ভেবে খালেদ আবার বললো- দোস্ত, তোকে একটা কথা বলবো, রাখবি? বললাম
-
বল, ও বললো- আমি এখন থেকে তোর বাসায় থাকতে চাই, আমার একা থাকতে খুব কষ্ট হয়, বিশেষ করে রান্না-খাওয়ার জন্য
আমি জানি ইমু কখনো রাজি হবে না তবুও খালেদকে থাকতে দিতে রাজি হলাম কেন রাজি হলাম তাও জানি না হয়তো বাবা হওয়ার আনন্দে... সপ্তাহখানেক হলো খালেদ আমার বাসায় এসে উঠেছে, ইমু প্রথমে খুব রাগ করেছিল, পরে অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি তবে মজার ব্যাপার হলো ইমু আগে যেমন খালেদকে নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করতো এখন সেটা আর করছে না, বরং মাঝে মধ্যে বলতে শুনেছি, খালেদ ভাই খুব ভালো ছবি আকে আমিও মনে মনে ইমুর ওপর বেশ খুশি হয়েছি কারণ শেষ পর্যন্ত সে খালেদকে বুঝতে পেরেছে,মাস খানেকের মধ্যেই টের পেলাম ইমু ও খালেদের মধ্যে সম্পর্কটা বেশ ফ্রি হয়ে গেছে, অফিস থেকে প্রায়ই রাতে ফিরে দেখতাম খালেদের রুমে বসে ইমু হাসাহাসির গল্প করছে, সেটা নিজের কাছে হালকা খারাপ লাগতো, তবুও কাউকে কিছু বলতাম না কারণ ইমুকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি দুজনেই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন পরিবার গড়েছি ইমু কখনোই আমাকে কষ্টের সাগরে ভাসানোর মতো কিছু করবে না ওর ওপর আমার বিশ্বাসটা প্রচন্ড রকমের বেশি, তাছাড়া খালেদও আমার ভালো বন্ধু সেও আমার বিশ্বাস নষ্ট করবে না,একদিন বিছানার চাদরের তলায় একটা কাগজ খুজতে গিয়ে হঠাঃ একটা ছবি পেলাম মোটা আর্ট পেপারে ইমুর নুড ছবি, ছবির নিচে লেখা তুমি ছবির চেয়েও সুন্দর বুঝলাম ছবিটা খালেদের আকা, খালেদ ইমুর এ রকম একটা ছবি একে দিয়েছে, অথচ ইমু আমাকে বলেনি মনে মনে বেশ রাগ হলো ইমুকে বকা দেব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠিক তখন ইমু আমাদের মেয়ে পুষ্পিতাকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকলো, আমার কাছে এসে বললো- নাও, তোমার মেয়েকে একটু কোলে নাও, পুষ্পিতা আমার কোলে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো, মুহূর্তের মধ্যে মনটা কেমন হয়ে গেল যেন ইমুকে কিছুই বলতে পারলাম না মাঝে মধ্যে ইমু খালেদের গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যায় কেনাকাটা করে অবশ্য এসব কথা ইমু রাতে ফিরলে আমাকে বলে হালকা মন খারাপ হয় কিন্তু কিছু বলতে পারি না খালেদকেও কিছু বলতে পারি না বললে হয়তো আমার সামনে আসবে না বাড়ি ছেড়ে চলেও যেতে পারে 
৩সকাল থেকেই আকাশে মেঘ জমে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল বাসা থেকে বেরোনোর সময় হাতে ছাতা ধরিয়ে দিয়ে ইমু বলেছিল ওগো, আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরবে। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, -কেন? 
বলেছিল- জানি না তবে বিকালের মধ্যেই ফিরে এসো।
সারা দিন ধরে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে, দুপুরে খাবার পর থেকে আর কাজ করতে মন বসছে না, ইমুর কথা মনে পড়লো, তাড়াতাড়ি না ফিরলে আবার রেগেমেগে কথা বলা বন্ধ করে দেবে, ওর সঙ্গে কথা না বলে আমি আবার থাকতে পারি না। বিকালের দিকেই বেরিয়ে পড়লাম অফিস থেকে, বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো, কোথাও ইলেকট্রিসিটি নেই, আশপাশের দোকানগুলোতে টিপটিপ করে লালচে ল্যাম্পের আলো জ্বলছে, রিকশা থেকে নেমে পাশের দোকান থেকে পুষ্পিতার জন্য এক প্যাকেট চিপস কিনলাম।
বাসার দরজার কাছে এসে থমকে দাড়ালাম, দরজার বাইরে থেকে শিকল লাগানো কিন্তু তালা লাগানো নেই, ভাবলাম ইমু বাইরে বেরোলে তো দরজায় তালা লাগানোর কথা, তাহলে বাইরে থেকে শিকল লাগালো কে? দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম ঘরের ভেতর প্রায় অন্ধকার চার্জার খুজে আলো জ্বালালাম সঙ্গে সঙ্গে পুষ্পিতা দৌড়ে এসে আমার পা দুটি আকড়ে ধরলো, আমি ওকে কোলে নিয়ে চিপসের প্যাকেটটা ওর হাতে দিলাম, জোরে কয়েকবার ইমুকে ডাক দিলাম কোনো সাড়া নেই, চার্জারের আলোয় কিচেন, বাথরুম ও খালেদের রুমে দেখলাম না কোথাও ইমু নেই ,পুষ্পিতা কোনো শব্দ করছে না, কোলে নেয়ার পর থেকে আমার গলা জড়িয়ে আছে, মুখের তিকে তাকালে মনে হচ্ছে ভয় পেয়েছে, মাথায় কিছু আসছে না, আবার খালেদের রুমে গেলাম, খালেদের রুমে কোনো পোশাক পরিচ্ছদ নেই তার মানে খালেদ চলে গিয়েছে, সঙ্গে ইমুও... 
আর ভাবতে পারছি না, মাথা ঝিমঝিম করছে টেবিলের ওপর সিগারেটের প্যাকেট পড়ে আছে। খালেদ ভুল করে রেখে গেছে, প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালালাম, দুটো টান দেয়ার পর কাশি লাগার মতো অবস্থা হলো কটু একটা গন্ধে ভরে গেল মুখ, ছুড়ে ফেলে দিলাম সিগারেট মোবাইলের রিং বেজে উঠলো, স্ক্রিনে খালেদের নাম্বার রিসিভ করলাম কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না কেবল শা শা শব্দ হচ্ছে অনেকক্ষণ পর ওপাশ থেকে শুনলাম আমি ইমু... বেশ রাগের স্বরে বললাম, কোথায় তুমি?
-
আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও, আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু খালেদকে তোমার চেয়েও বেশি ভালোবাসি 
কি করবো বুঝতে পারলাম না,এই ছোট বাচ্চাকে আমি কিভাবে   পালন করব? সিদ্ধান্ত নিলাম ছাদ থেকে ফেলে পুষ্পিতাকে মেরে ফেলবো। সঙ্গে সঙ্গেই পুষ্পিতাকে নিয়ে ছাদে উঠলাম ,আকাশ মেঘে ঢাকা থাকার কারণে ছাদে বেশ অন্ধকার, এখনো ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে, মনটাকে শক্ত করে ছাদের কানায় গিয়ে দাড়ালাম, এখান থেকে ফেলে পুষ্পিতাকে মেরে ফেললে কেউ টের পাবে না। পুষ্পিতা আমার গলা শক্ত করে আকড়ে ধরে আছে ,আমার হাত-পা কাপছে আমি ওকে কি করে ফেলবো? 
চোখ বন্ধ করলাম, আমার বাবার মুখটা ভেসে উঠলো মনে মনে পড়লো, আমি যখন ছোট তখন আমার মাও আমাকে ফেলে বাবার বন্ধুর সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আমার বাবা তো আমাকে পালন করেছে, তাহলে আমি কেন পুষ্পিতাকে মেরে ফেলবো? পুষ্পিতা আগের মতোই আমার গলা আকড়ে আছে, ওর শরীর থেকে কেমন চেনা একটা গন্ধ পাচ্ছি, এক সময় টের পেলাম পুষ্পিতার গায়ের গন্ধটা ঠিক আমার শরীরের গন্ধের মতো। ওর শরীরে যে আমারই রক্ত, পারলাম না ওকে ফেলতে বুকের সঙ্গে শক্ত করে চেপে ধরে বললাম- মারে তোর মা তোকে ছেড়ে চলে গেলেও আমি তোকে ছেড়ে কখনো যাবো না তুই যে আমার সন্তান, আমার মেয়ে। কেদে ফেললাম, ইমুকে হারানোর জন্য নয়, পুষ্পিতার জন্য। বর্ষার এ ঝিরঝিরে বৃষ্টির সঙ্গে আমার চোখের বৃষ্টি মিশে গাল বেয়ে পড়ছে নিচে।  

2 মন্তব্য(গুলি):

নামহীন বলেছেন...

আমি এটা দিয়ে নাটক তৈরি করতে চাই । আপনি রাজী

প্রিন্স আহমেদ বলেছেন...

আমার সাথে যোগাযোগ করুন ০১৮৩৩১০৪৭৪৯

 
ডিজাইন করেছেন # প্রিন্স আহমেদ । ফোনঃ ০১৯১৬৩৪৪৪৪৪ । ই-মেইলঃ prince@dirdgroup.org